Friday, December 26, 2025
Homeকলকাতারাখির সুতোর টানে স্বাবলম্বিতার স্বপ্ন বুনছেন মেমারির মহিলারা

রাখির সুতোর টানে স্বাবলম্বিতার স্বপ্ন বুনছেন মেমারির মহিলারা

পূর্ব বর্ধমান : একটা ছোট্ট রাখি। হাতে বাঁধা মাত্রই ভালোবাসা, সুরক্ষা আর ভ্রাতৃত্বের প্রতীক। কিন্তু এই রাখির সুতোয় যে কত স্বপ্ন জড়িয়ে থাকে, তা কি আমরা ভেবেছি কখনও? পূর্ব বর্ধমান জেলার মেমারি-২ ব্লকের বোহার-১ ও গন্তার-১ পঞ্চায়েত এলাকার মহিলারা এখন দিনভর হাতে তুলে নিয়েছেন সুতো, পুঁতি আর রঙিন কাগজ। সকাল থেকে সন্ধ্যা, রোদের তাপে ঘাম ঝরিয়ে তাঁরা তৈরি করছেন হাজার হাজার রাখি—স্বপ্ন দেখছেন একটু বেশি উপার্জনের। সামনে রাখি বন্ধন উৎসব তার আগেই রাখি তৈরিতে ব্যস্ত এই সকল মহিলারা।

রাখি তৈরির সঙ্গে যুক্ত মহিলারা বলেন, “এক গ্রোস অর্থাৎ ১৪৪টি রাখি বানিয়ে আমরা পাই মাত্র ৮ থেকে ১০ টাকা। সারাদিন খেটে ৮ থেকে ১০ গ্রোস করলে মেলে মোটে ৮০ থেকে ১০০ টাকা। এতে সংসার চলে না, ছেলেমেয়ের পড়াশোনা চলে না।”

তারা চায়, কাজটা যেন স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মাধ্যমে স্থায়ীভাবে দেওয়া হয়। তাহলে হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ পাওয়া যাবে, কাজের পরিমাণ বাড়বে, এবং উপার্জনও হবে আরও বেশি। রাজ্য সরকারের কাছে তাদের অনুরোধ—এই রাখি তৈরির মতো হস্তশিল্প যেন স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলির হাতে তুলে দেওয়া হয়।

রাখি শুধু একটা সুতো নয়, তার গভীর সামাজিক ও ঐতিহাসিক তাৎপর্য আছে। পৌরাণিক কাহিনিতে আছে, এক যুদ্ধে শ্রীকৃষ্ণের হাতে আঘাত লাগলে দ্রৌপদী তাঁর শাড়ির আঁচল ছিঁড়ে কৃষ্ণের হাতে বেঁধে দেন। সেই থেকেই শুরু রাখি বন্ধনের রীতি—ভ্রাতৃত্ব ও সুরক্ষার বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া।
আর ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গের প্রতিবাদে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হিন্দু-মুসলিম ঐক্যের ডাক দিয়ে রাখি বন্ধন উৎসবের প্রচলন করেন নতুন প্রেক্ষাপটে। সেই ডাকে সাড়া দিয়ে গোটা বাংলায় ছড়িয়ে পড়ে রাখির সামাজিক তাৎপর্য।

রাখি তৈরির সঙ্গে যুক্ত মহিলারা চান, তাঁদের এই শিল্প যেন সরকারি ভাবে প্রশিক্ষণ, সরকারি বরাদ্দ এবং বিপণনের সুযোগ পেলে এই রাখিই হয়ে উঠতে পারে তাঁদের আয়ের অন্যতম মূল উৎস।

“শুধু উৎসবের সময় নয়, সারা বছর যেন এমন কাজ পাই,”—আবেগমথিত কণ্ঠে বললেন একজন মহিলা। “আমরা পরিশ্রম করি, যদি সরকার পাশে থাকে তাহলে এই রাখি আমাদের ভবিষ্যৎ বদলাতে পারে।”

এবিষয়ে গন্তার-১ পঞ্চায়েতের উপপ্রধান মধুসূদন মল্লিক বলেন, “রাখি যারা তৈরি করছেন, তাদের যথেষ্ট পরিশ্রম করতে হয়, কিন্তু সেই অনুযায়ী মজুরি তারা পান না। আমাদের রাজ্য সরকার সবসময় সাধারণ মানুষের পাশে থাকে। আমরাও চাই, যাঁরা এই কাজের সঙ্গে যুক্ত, তাঁরা যাতে আগামী দিনে রাখি তৈরি করে কিছুটা অর্থ উপার্জন করতে পারেন।”

তিনি আরও জানান, রাখি তৈরির জন্য সাধারণত কোনও একটি কোম্পানি থেকে রাখি তৈরির সামগ্রী সংগ্রহ করে এবং তৈরি করে ফের সেই কোম্পানিকেই দিয়ে দেন। কিন্তু তার বিনিময়ে যে মজুরি মেলে, তা তুলনায় অনেকটাই কম। এই পরিস্থিতিতে আমরা পঞ্চায়েত স্তর থেকে চেষ্টা করব যাতে এই মহিলারা সরকারি সহায়তা পান এবং আগামী দিনে আরও বেশি করে স্বনির্ভর হতে পারেন।”

এই মুহূর্তে তাঁদের হাতে শুধু সুতো নয়—আছে স্বপ্ন, প্রত্যাশা, এবং একটা ভালো আগামী গড়ে তোলার আশাবাদ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular

Recent Comments