Friday, December 26, 2025
Homeখবরসরকারি সুবিধা হারানোর ভীতি! গায়ে আগুন দিয়ে প্রাণ দিলেন মহিলা

সরকারি সুবিধা হারানোর ভীতি! গায়ে আগুন দিয়ে প্রাণ দিলেন মহিলা

পূর্ব বর্ধমান : এসআইআর আতঙ্কে এক মহিলার আত্মহত্যার অভিযোগ ঘিরে তীব্র চাঞ্চল্য পূর্ব বর্ধমানের ভাতারে ভূমশোড় গ্রামে। মৃতার নাম মস্তুরা খাতুন (৪০)। পরিবারের অভিযোগ, এসআইআর ফর্ম ফিলআপ করা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই আতঙ্কে ভুগছিলেন মস্তুরা। তাঁর আশঙ্কা ছিল ফর্ম জমা দিলে রেশন, লক্ষ্মীর ভান্ডারসহ সরকারি সুবিধা বন্ধ হয়ে যেতে পারে, এমনকি ভোটার তালিকা থেকেও নাম বাদ পড়তে পারে। শুক্রবার বড়দি আস্তুরা খাতুন তাঁকে বোঝিয়ে ফর্ম ফিল-আপ করান। পরিবারের দাবি, এরপরই গভীর রাতে আতঙ্কে গায়ে আগুন লাগিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন মস্তুরা। আশঙ্কাজনক অবস্থায় ভাতার স্টেট জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।

স্থানীয় সূত্রে খবর, মৃতার নাম ২০০২ সালের ভোটার তালিকায় ছিল। স্বাভাবিকভাবেই তাঁর নাম উঠত তালিকায়। ২০ বছর আগে তাঁর বাবা আজিজুল হক কাজি এবং মা কাসেরা মারা গিয়েছেন। দিদি এবং বোনের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। পরিযায়ী শ্রমিক দাদা সিরাজুল হক কাজির পরিবারে থাকতেন অবিবাহিতা মুস্তারা। সরকারি প্রকল্পে পাওয়া অর্থ দিয়ে দাদার সংসারে কিছু সাহায্য করতে পারতেন। এসআইআর নিয়ে ধারাবাহিক প্রচারে ভীত হয়ে পড়েছিলেন মাস্তুরা। ভয় পেতেন। তাই এই ঘটনা।
মৃতার বড়দি আস্তুরা খাতুন বলেন, “ও প্রথম থেকেই সরকারি সুবিধা চলে যাবে বলে ভয় পাচ্ছিল। সেই আতঙ্কেই ও এই পথ বেছে নিয়েছে।” বৌদি সাবিনা খাতুন জানান, “রাতে হঠাৎ উঠে দেখি শরীরের বেশিরভাগটাই পুড়ে গেছে। হাসপাতালে পৌঁছনোর আগেই সব শেষ।”
ঘটনার খবর পেয়ে শোকস্তব্ধ পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে যান ভাতারের বিধায়ক মানগোবিন্দ অধিকারী।
শনিবার সন্ধ্যায় মৃতার বাড়িতে যান লোকসভার সাংসদ তথা তৃণমূল যুব কংগ্রেসের রাজ্য সভাপতি সায়নী ঘোষ। সঙ্গে ছিলেন বিধায়ক মানগোবিন্দ অধিকারী, জেলা পরিষদের শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষ শান্তনু কোনারসহ তৃণমূল নেতৃত্ব। সায়নী বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অভিষেক ব্যানার্জী গোটা বিষয়টি নজরে রেখেছেন। কেউ আতঙ্কিত হবেন না। এসআইআর নিয়ে সমস্যা হলে আমাদের কার্যালয়ে যোগাযোগ করুন। দল সবসময় মানুষের পাশে আছে।” তিনি আরও অভিযোগ করেন, “বিজেপি এবং নির্বাচন কমিশনের আতঙ্ক সৃষ্টির রাজনীতির ফলেই এমন মর্মান্তিক ঘটনা ঘটছে।”
অন্যদিকে, বিজেপি বিধায়ক লক্ষ্মণ ঘোড়ুই দাবি করেন, “তৃণমূল শুরু থেকেই এসআইআর প্রক্রিয়া নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। এই আতঙ্ক তাদেরই সৃষ্টি। বিজেপি বা কমিশনের ওপর দোষ চাপিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা তুলতে চাইছে শাসকদল।”
রাজ্যের মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস বলেন, “দুই বছরের কাজ দুই মাসে সেরে ফেলতে গিয়ে ইতিমধ্যেই প্রায় ৪৫ জন আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন। কমিশনের কাছে জানতে চাই, আর কত প্রাণ গেলে এই প্রক্রিয়া বন্ধ হবে?”
এদিকে পুলিশ একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করেছে। মৃতদেহ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular

Recent Comments