পূর্ব বর্ধমান : একুশে জুলাই শহিদ দিবসের সমাবেশকে সামনে রেখে শনিবার বর্ধমান শহরে অনুষ্ঠিত হল তৃণমূল যুব কংগ্রেসের কর্মীসভা। তবে এদিনের মঞ্চে তৃণমূলের একাধিক নেতার বক্তব্যে শাসকদলের অন্দরের ক্ষোভ ও ক্ষতের ইঙ্গিত মিলল স্পষ্টভাবে। নাম না করে নিজেদের দলের দিকেই তোপ দাগলেন একাধিক নেতা।

সভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে তৃণমূল নেতা প্রণব চ্যাটার্জী বলেন, “বর্ধমানের যারা মাটিকে চেনে না, তারাই আজ ক্ষমতা নিয়েছে। তার ফল, পাড়ায় পাড়ায় বেকার ভরে গিয়েছে। তোলাবাজদের চামচাগিরি চলছে, আর যত্রতত্র গজিয়ে উঠছে বহুতল ফ্ল্যাট। টাকা তোলা হচ্ছে ধারে ধারে। বর্ধমান ডেভেলপমেন্ট অথরিটি তৈরি করেছিল সিপিএম। কেন করেছিল? শহরের উন্নয়নের জন্য। আজ সেই উন্নয়নের চিহ্ন কোথায়? শুধুমাত্র চারপাশে নিকাশি নালা তৈরি করলেই উন্নয়ন হয় না। প্রকৃত উন্নয়ন হল যখন এলাকার বেকার যুবকরা চাকরি পায়। তাঁর প্রশ্ন, “তবে কি আমরা অপেক্ষা করবো, কবে টাটা, আদানি আসবে আর চাকরি দেবে? সেই পর্যন্ত আঙুল চুষে বসে থাকবো? এখন বর্ধমানে কোথায় উন্নয়ন? সব শেষ করে দিয়েছে নেতারাই।” তিনি ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, “এখন আমাদের দলের আলোচনার বিষয় কী? কোথায় ফার্স্ট ফ্লোর উঠল, সেখানে কার টাকা কবে পৌঁছবে—এই নিয়েই তো ব্যস্ত সবাই। এই অবস্থায় ২৮টা ওয়ার্ডে মানুষ বলছে, আমরা এই দলকে আর ভোট দিতে পারব না। বিধানসভায় দেয়নি, লোকসভাতেও নয়, আর পৌরসভার ফল তো বলারই নয়।”

তাঁর এমন বক্তব্য ঘিরে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে রাজনৈতিক মহলে। প্রশ্ন উঠছে, প্রণববাবু কার উদ্দেশে এমন আক্রমণ শানালেন — দলের অন্দরেই কি চলেছে ক্ষমতা ও প্রভাবের লড়াই?
সভায় মুক্তার মিঞা ও মেহেবুব রহমানও দলীয় সংগঠন ও নেতৃত্বের ভূমিকা নিয়ে একাধিক প্রশ্ন তোলেন।

যুব কর্মীদের উদ্দেশ্যে তৃণমূল যুব সভাপতি রাসবিহারী হালদার বলেন, “আমি সবসময় তোমাদের সঙ্গে আছি। এলাকায় এলাকায় ঘুরে পুরনো কর্মীদের খুঁজে বের করুন, সম্মান দিয়ে আবার সংগঠনের কাজে লাগান। কারণ, এটাই সময় দলকে আরও শক্তিশালী করার।” তিনি আরও বলেন, “বিরোধীদের কোনও সংগঠন নেই। তারা শুধু সাংবাদিকদের সামনে ডায়লগ দেয়। তৃণমূল কংগ্রেস ২০২৬-এর বিধানসভা নির্বাচনে আগের থেকেও বেশি আসনে জিতবে। আমাদের নেতা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, বিরোধীরা ৫০টির নিচে আসন পাবে।”
বক্তব্যে দলীয় কর্মীদের আরও সক্রিয় করে তুলতে আহ্বান জানানো হলেও, সমানতালে উঠে আসে দলেরই অভ্যন্তরীণ অব্যবস্থা ও ক্ষোভের সুর।
এই কর্মীসভার উপস্থিত ছিলেন জেলা তৃণমূল কংগ্রেস যুবনেতা রাসবিহারী হালদার, INTTUC সভাপতি সন্দীপ বসু, আব্দুল রব, উত্তম সেনগুপ্ত সহ একাধিক নেতৃত্ব।
এদিনের বক্তব্যে কার দিকে ইঙ্গিত ছিল — বিজেপি, সিপিএম না কি নিজেদের দিকেই — তা নিয়েই শুরু হয়েছে জোর জল্পনা। একুশে জুলাইয়ের আগে এই ক্ষোভ দলের অন্দরকে কতটা নাড়িয়ে দেবে, এখন সেটাই দেখার।

